ট্রাম্পের প্রতি অ্যাপলের সতর্কবার্তা!
চীনা পণ্যের ওপর আরো এক ধাপ শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এ সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটার আরজি জানিয়েছে একাধিক মার্কিন কোম্পানি। এবার প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের পক্ষ থেকেও একই ধরনের আরজি জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্যে, বাণিজ্য বিরোধ নিয়ে চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব না হলে আরো অন্তত ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। বাস্তবে এমন হলে তা মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য ব্যবসায় সুযোগ সৃষ্টি করবে। গতকাল বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অ্যাপলের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউজে পাঠানো এক চিঠিতে, চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য লাভজনক হবে।
বিবৃতিতে অ্যাপল জানিয়েছে, চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নষ্ট হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেসব চীনা পণ্যে আবারো শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছে, সে তালিকায় অ্যাপলের প্রধান এবং জনপ্রিয় পণ্য আইফোন, আইপ্যাড ও এয়ারপডের মতো পণ্য রয়েছে। পাশাপাশি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে অ্যাপল ডিভাইস মেরামতের জন্য চীন থেকে সরবরাহকৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ওপরও। যে কারণে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলে আইফোন, আইপ্যাড ও এয়ারপডের মতো পণ্যগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপল পণ্য মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতি দেখা দেবে। যে কারণে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে আরো শুল্ক না বসানোর আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায় ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করেছে অ্যাপল।
বিবৃতিতে অ্যাপল জানিয়েছে, চীনা শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হুয়াওয়ের উপস্থিতি খুবই সামান্য। কাজেই যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করলে তাতে হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবসায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
এটা স্পষ্ট, চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে বৈশ্বিক অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা সুবিধা পাবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিষয়ে এরই মধ্যে বিরোধিতা করছে মার্কিন শীর্ষ ল্যাপটপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো। গত বুধবার এ নিয়ে তারা অনলাইনে একটি যৌথ বিবৃতিও দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নতুন করে শুল্ক আরোপের কারণে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং চীনা ব্যবসানীতির কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন প্রচেষ্টায় এ পদক্ষেপ কোনো কাজে আসবে না। নোটবুক ও ডিটাচেবল ট্যাবলেট বাজারে আধিপত্য করছে মূলত ডেল, এইচপি, মাইক্রোসফট ও ইন্টেলের মতো মার্কিন কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ৫২ শতাংশই দখলে রেখেছে প্রথম তিনটি কোম্পানি।
যৌথ বিবৃতিতে কোম্পানিগুলো বলেছে, চীনা পণ্য আমদানিতে নতুন করে আবগারি শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাপটপের দাম বাড়বে। এতে ভোক্তা এবং শিল্প দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের চীনা বাণিজ্যনীতি পরিবর্তনে চাপ প্রয়োগের যে লক্ষ্য, তাতে এ কৌশল কার্যকর হবে না।
কনজিউমার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে কোম্পানিগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত আবগারি শুল্ক বাস্তবায়ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটের দাম কমপক্ষে ১৯ শতাংশ বাড়বে। সে হিসাবে খুচরা বাজারে একটি ল্যাপটপ কিনতে ক্রেতাকে অতিরিক্ত ১২০ ডলার গুনতে হবে। এ পরিমাণে দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যসংবেদনশীল অনেক ক্রেতা একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। বিশেষ করে ছুটির দিন এবং স্কুলের শিক্ষাবর্ষের শুরুতে এমন দাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাবে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, অ্যাপল যদি চীনে উৎপাদিত আইফোন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে চায়, তাহলে অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম ৯ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এমন হলে বৈশ্বিক বাজারে আইফোনের চাহিদা কমবে ১০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। শুধু চাহিদার ক্ষেত্রেই নয়, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অ্যাপলের শেয়ারপ্রতি আয়ের ওপরও। আইফোনের দাম বাড়ানোর ফলে চাহিদা কমলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় ৬-৭ শতাংশ কমবে।
সূত্র: বণিক বার্তা