টেলিকম খাতের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে এর প্রবৃদ্ধিকে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এই খাতের সংশ্লিষ্টরা। গতকাল বুধবার রাজধানীর লা ভিঞ্চি হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ মন্তব্য করেন। প্রস্তাবিত ‘বাজেট : টেলিকম খাতের বাস্তবতা’ শীর্ষক এই বৈঠকের আয়োজন করে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)। সংগঠনের সভাপতি মুজিব মাসুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এ খাত সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপু। টিআরএনবির অর্থ সম্পাদক শামীম জাহাঙ্গীর মূল বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বৈঠকে সঞ্চালনা করেন।
রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি আমাদের সঙ্গে থাকে তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। টেলিকম খাতে আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ সরকারের খাতে চলে যায়। আমরা কেন গ্রামীণফোনের মতো মুনাফা করব না। টেলিটক আইসিইউতে রয়েছে। এটি বাদে বর্তমানে তিনটি কোম্পানি রয়েছে। তারাও যদি টিকে থাকতে না পারে, তাহলে তা এই খাতের জন্য নেতিবাচক হবে। ২১ বছর ব্যবসা করার পরেও যখন মুনাফার স্বপ্ন দেখতে পারি না তখন বুঝতে হবে আসলেই পরিস্থিতি খুব খারাপ।
মোবাইল ফোন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে সেবাকে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে সরকার ঘোষণা দিয়ে এসেছে, সেখানেই করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। এ খাত থেকে করের বোঝা কমানোর দাবি জানান তিনি।
টেলিটকের ডিজিএম সাইফুর রহমান খান বলেন, টেলিকম খাতে বিভিন্ন কর ও শুল্ক আরোপের ফলে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে আমাদের মতো ছোট কোম্পানির টিকে থাকা কঠিন হবে।
বাংলালিংকের হেড অব ট্যাক্স সারোয়ার হোসেন খান বলেন, সরকারের বেশ কিছু টার্গেট রয়েছে। আর এই টার্গেট পূরণে টেলিকম খাতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। অথচ অন্যান্য খাতকেও টার্গেট করা যেতে পারে। এ ধরনের পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে আয়করের দিকে সরকারের বেশি নজর দেওয়া উচিত।
গ্রামীণফোনের ডিরেক্টর ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, এ খাতের মধ্যে আমরাই প্রথম পুঁজিবাজারে গিয়েছি। এ জন্য করপোরেট ট্যাক্সের ওপর ১০ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়া হয়। কিন্তু পুঁজিবাজারে যাওয়ার তিন বছরের মাথায় কর রেয়াত ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অন্য কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে যেতে নিরুৎসাহিত হবে।
অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, টেলিকম খাতে ১০ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বের কোথাও নেই। সেই সঙ্গে সিম ট্যাক্স এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে থামিয়ে দিচ্ছে। সফটওয়্যার খাত প্রণোদনা পেয়েছে। অথচ টেলিকম খাত কখনও প্রণোদনা চায়নি। যদি সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায় তাহলে কেন ইন্টারনেট ফ্রি করা যাবে না। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেন, তা খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মেফতাহ উদ্দিন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করেই করের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি এককভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেন, স্মার্টফোনের সুফলের চেয়ে কুফল বেশি দেখা যাচ্ছে। খুব বেশি স্মার্টফোনের দরকার নেই। সব নীতিমালাতে ভালো ফল দেবে তা আশা করতে পারেন না। স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁস মেরে ফেলতে চাই না, যেভাবেই হোক একে বাঁচিয়ে রাখব।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে আলোচনার বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত কিছু করার পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।